অকৃতজ্ঞ

                 অকৃতজ্ঞ 

চোখ খুলে কাকলি দেখল অনেকগুলো মুখ। তার দিকে ঝুঁকে,তাকে দেখছে। একটা অল্প বয়সের মেয়ে তার কোমরে সাপোর্ট দিয়ে ব'সে। তার মাথাটা কারো কোলে। সারা মাথা,মুখ ভিজে। ভীষণ নিস্তেজ লাগছে। নিজের ঘর-মেয়ের মুখ-ট্রেন কম্পার্টমেন্টের ভিড় চকিতে মনে ভিড় ক'রে এসেই....ওঠার চেষ্টা ক'রল। প্রথমেই অল্প বয়সী মেয়েটা,কপালে,মাথায় হাত বুলিয়ে,আশ্বস্ত ক'রল। ভিড়ের থেকে অনেকেই তার সঙ্গে গলা মেলাল।শুয়ে থাকতে হ'ল। কী হ'ল!? কিছু বুঝতে পারছে না। ডান হাঁটুটায় জ্বালা করছে। কেউ একজন কপালে ঠাণ্ডা কিছু চেপে ধ'রল। ডান রগটা টন্ টন্ ক'রে উ'ঠল। কাকলি হাত দিয়ে সরিয়ে দেবার চেষ্টা ক'রল। তখনও সবাই আশ্বস্ত ক'রল। কাকলির গলাটা শুকিয়ে আছে। জল চাইল। মাথার দিক থেকে একটা ছেলে সামনে এল। মাথায় ফেজ,গালে দাড়ি,জামা-প‍্যান্ট পরা,হাতে জলের বোতল। কাকলির মুখে জল দিতে চাইছিল। কাকলি হাত নেড়ে তাকে বারন ক'রল। আবার উঠে ব'সতে চাইল। সবাই বুঝল। যাঁর কোলে মাথাটা ছিল তিনি খুব যত্নে খুব আস্তে আস্তে কাকলিকে বসিয়ে দিলেন। হাত দিয়ে জলের বোতলটা নিতে গিয়েও পা'রল না। দাবনাটায় খুব ব‍্যাথা লাগছে। হাঁ ক'রল। ছেলেটা কাকলির থুতনিটা এক হাতে ধ'রে,কাকলির গালে একটু একটু ক'রে বার কতক জল দিল। শরীরটা বেশ ঝিমঝিম ক'রছে। মাথার ওপর প্লাটফর্মের ফ‍্যানটা থেকে হালকা হাওয়া লাগছে। একটু বাতাস দরকার। ওকে ঘিরে থাকা ভিড়টা ধীরে ধীরে পাতলা হ'য়েছে। মেয়েটা কাকলির ব‍্যাগটা ওর হাতে ধরিয়ে দিল। ছেলেটা বোতলের ঢাকনা লাগাতে লাগাতে,একটু ব'সে রেস্ট নিতে ব'লে, চ'লে গেল। কাকলির ব‍্যাগে তেমন কিছু ছিল না। জলের বোতল,ছাতা,ব‍্যাঙ্কের পাশ বই,দু'শ টাকার দুটো নোট,মোবাইল আর কিছু খুচরো পয়সা। মেয়েটার পরামর্শে সেগুলো একবার সে দেখেও নিল। ঠিকই আছে। মেয়েটা আশ্বস্ত ক'রল,সে তার কাছেই ব'সে থাকবে,যতক্ষণ না বাড়ির কেউ আসছে। তাই মেয়েকে ফোন।

সেদিন যে একটা বড় বিপদ থেকে বাঁচা গেছে,সেটা পরিচিত,আত্মীয়-স্বজনদের মধ‍্যে ফোনাফুনিতে এখন বেশ একঘেয়ে হ'য়ে গেছে। এর মধ‍্যে একদিন ভাশুরের ছেলে অমিয় এল। ভাশুরদের অবস্থা ভালো নয়। মাঝে মধ‍্যেই অমিয় আসে। দেশের বাড়ি থেকে। টাকা-পয়সা দিতে হয়।ফোনে ওদেরকে আর অসুস্থ হ'য়ে পড়ার কথাটা জানানো হয়নি। ভাশুরের বয়স হয়েছে। তিনিও নানান রোগে ভোগেন..... কাকলি অমিয়কে দেখেই....

এসেছিস,আয়। আমার কি একটা বিপদ গেল! বোস।

কি হ'য়েছিল!?

আরে,সেদিন ঢাকুরিয়ায় ব‍্যাঙ্কে গিয়েছিলাম। বেশ সুস্থ ছিলাম,কোনও অসুবিধে ছিল না। ব‍্যাঙ্কের কাজ সেরেছি। হেঁটে হেঁটে স্টেশনেও এসেছি,কিছু অসুবিধে টের পাইনি। বাঘা যতীনে ট্রেন থেকে নামা পর্যন্ত মনে আছে......তারপর কি হ'ল কে জানে....জ্ঞান ছিল না.....জ্ঞানটা আসতে দেখি,সকলে ভিড় ক'রে রয়েছে.....কাপড়,জামা সব ভিজে,এক মাথা জল....সে এক যাচ্ছেতাই অবস্থা।

মিনুকে ফোন করলে না!?

ও-ই তো আমায় নিয়ে এল! একটু সুস্থ হ'তে ফোন করলাম। ও আবার ওলা বুক ক'রে নিয়ে এল....এই 
দেখ না,কপালটা এখনও ফুলে আছে!

এ ব্বাবা! বড় কিছু হ'য়ে যায়নি,এই রক্ষে......

রক্ষে আর হ'ল কই! একশ টাকার বান্ডিলটা চ'লে গেল! মিনুকে কিছু বলিনি। তুই যেন খবরদার,এই কথাটা কাউকে বলিস না! মিনুও জানে না!
              _____________________
.


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

দুর্গাপুজোর সাত কাহন

আলয়

এসপার-ওসপার