শ্রুতি নাটক
গুরুজন
চরিত্র -- মিঃ ঘোষ, মিসেস ঘোষ , বুম্বা(ছেলে)।
সময় -- সকাল
মিসেস ঘোষ -- (সবেমাত্র ঘুম ভেঙেছে)আ-আঃ....এই শুনছ? (হাই তোলে) তোমায় আজ তাড়াতাড়ি বেরোতে হবে বলেছিলে! এই...শুনছ?
মিঃ ঘোষ -- হুঁ...(ঘুমন্ত)
মিসেস -- তাড়াতাড়ি বেরোবে বলেছিলে না!....ওঠো!
মিঃ -- হ্যাঁ -- হ্যাঁ....দেরী হ'য়ে গেল? আমার মোবাইলটা একটু দাও তো!
মিসেস -- অ্যা-ই শুরু হ'ল। চোখ খুলেই ফরমাস।
মিঃ -- কি করব বল,চোখ বুজোনো তো আমার ইচ্ছায় হবে না।
মিসেস -- রাম-রাম, সক্কাল বেলায় এ কী অলুক্ষুণে কথা!
মিঃ -- সকালবেলার শেষ পাতের ঘুমটা কেড়ে নেওয়াও কি খুব সুলক্ষণের কথা?
মিসেস -- দেখ,তুমিই কাল বলেছিলে,আজ সকাল সকাল বেরবে।
মিঃ -- সে কথা বলেছিলাম,কারণ তোমার ভা'য়ের বাড়ি তত্ত্বটা দিয়ে যেতে হবে ব'লে।
মিসেস -- তত্ত্ব!?.....বচ্ছরান্তে তাদের ক'টা কাপড়-জামা দেওয়া হয়,তাকে তুমি তত্ত্ব বলছ?
মিঃ -- এ তত্ত্ব সে তত্ত্ব নয় রে বাবা,এ হ'ল সংসারে শান্তি বজায় রাখার তত্ত্ব।
মিসেস -- অত কথার কি আছে? অসুবিধে থাকলে যাবে না!
মিঃ -- গুরুজনের কথার অবাধ্য হওয়ার মতো লোক আমি নই।
মিঃ -- এই জন্যেই বলে,বয়েস বেশী হলেই বুদ্ধি পরিণত হয় না।......গুরুজন কাকে বলে? যে জনের গুরুত্ব কারো থেকে বেশী সে-ই তো তার গুরুজন,না কি?
মিসেস -- তার মানে,আমার গুরুত্ব তোমার থেকে বেশী?
মিঃ -- নয়? দেখ,তোমার শাড়ি দু'হাজার,আমার জামা পাঁচশ,তোমার পার্লার পাঁচশ,আমার সেলুন পঞ্চাশ। তারপর দেখ,তুমি রান্না না করলে আমার ডান হাত বেকার.....এমন আরও কত উদাহরণ দেব?
মিসেস -- থাক্-থাক্,এ স-ব তোমার কথার চালাকি! নিজের স্ত্রীকে কেউ কখনও গুরুজন হিসেবে দেখে না।
মিঃ -- তুমি জানো না। সেটা অবশ্য তোমার দোষ নয়,তুমি তো কখনো বিবাহিত পুরুষদের আড্ডায় যাও নি;গেলে,জানতে পারতে।
মিসেস -- সেখানে সবাই নিজেদের বৌকে গুরুজন বলে?
মিঃ -- আলবাৎ বলে! সর্বজনীন পরীক্ষিত ফলই তো সিদ্ধান্ত রূপে স্বীকৃতি লাভ করে! ছোটবেলায় পড় নি? দাও,মোবাইলটা দাও।
মিসেস -- এ-ই...নাও! আর এই যে বাড়িতে থাকলে,উদয় অস্ত ফরমাস? এটাকে তোমাদের বিবাহিত পুরুষরা কি বলে?
মিঃ -- সার্ভিস।এটা অবশ্য বিবিহিত মহিলারা বলে।কেন? তুমি জানো না? বুম্বার স্কুলে তো প্রায়ই তোমায় বসে থাকতে হয়,অন্য মায়েদের মুখে শোন নি!? তুমি ভীষণ অমনোযোগী।
মিসেস -- আমি আর কি কি?সেটা বল দেখি!
মিঃ -- দূর,স্বয়ং শিব যার ব্যাখ্যা দিতে পারেনি,আমি সে দুঃসাহস দেখাব না।
মিসেস -- তোমার শুধু বাকচাতুরি। তাড়াতাড়ি কল-বাথরুম সেরে নাও;টেবিলে খাবার দোব।
মিঃ -- তবে তাই হোক।
(কয়েক সেকেন্ড পর,খাবার টেবিল)
মিঃ -- বাঃ;কফিটা দারুণ বানিয়েছ! এগুলো কিসের বড়া গো?
মিসেস -- বড়া নয়,পকোড়া।.....মাসরুম পকোড়া।
মিঃ -- সকালবেলা এত কিছু করলে! বাব্বাঃ!
মিসেস -- কেন ভালো হয়নি?
মিঃ -- দারুণ! কিন্তু এর নামটা ঠিক হয়নি।
মিসেস -- কেন? এর নাম কী?
মিঃ -- এর নাম মাসরুম টিক্কাটিকি।
মিসেস -- অতশত জানিনা।
মিঃ -- জানতে হবে তো! আচ্ছা,তোমার রেসিপিটা একটু বল.....
মিসেস -- (বেশ আগ্রহের সঙ্গে) এই তো...মাসরুমগুলোকে সাইজ মতো কেটে,ডিমটা ফেঁটে,কর্ণ ফ্লাওয়ার দিয়ে...
মিঃ -- ব্যাস্-ব্যাস্, আমি ঠিক বলেছি।তোমার প্র্যাকটিক্যাল নলেজটা আছে কিন্তু থিওরিটা দুর্বল। শুনে নাও,যখনই ওই কর্ণফ্লাওয়ার,ভিনিগার,শস্ এই সবের কোনো একটা বা সবগুলো দিয়ে রান্না করবে,তখনই ওই ভাজা-ভুজি,ডাল,শুক্তো এসব বলা চলবে না। তখন এই সাবেকি নামের সাথে ফ্রাই,মাখানি,তারপর নিজের পছন্দ করা নামও দিতে পারো,যেমন এই টিক্কাটিকি!
মিসেস -- ও,ইয়ার্কি করছ? তুমি এর নাম দিলে।
মিঃ -- সেটা ভরসা ক'রে ব'লতে পারছি না। মাসরুম টিক্কাটিকি আমার আগে কেউ যে বলেনি তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
মিসেস -- হ্যাঁ শোনো,বুম্বার স্কুলের ফিসটা যদি.....আজ...দিয়ে আর কাজে যাও.....
সময় হবে?
মিঃ -- হবে মানে? এখানে যদির কোনো প্রশ্নই নেই। যাবার পথে শালার বাড়ি,
ফেরার পথে স্কুল বাড়ি। ড্রিবল্ করার
সুযোগ আছে যখন...
মিসেস -- ড্রিবল্ আবার কি?
মিঃ -- বুঝলে না?....এই ধর,আজ আমি স্কুলের ফিসটা এড়িয়ে গেলাম,কাল রান্নার গ্যাস এসে ট্যাকল্ করল -- তখন না দেওয়া হ'ল ফিস,না দেওয়া হ'ল গ্যাস,সোজা স্ট্রেচারে মাঠের বাইরে,মানে.....
মিসেস -- তোমার এত মানে বুঝে আমার কাজ নেই। যা দরকার তা ব'লে দিলাম,ব্যাস। আমি যাই, এবার ছেলের ঘুম ভাঙাতে হবে।(কয়েক সেকেন্ড পর)বাবু--বুম্বা এবার উঠে পড় বাবা। বেলা হ'য়ে যাচ্ছে;পড়তে বসতে হবে না? উঠে পড় বাবা।
বুম্বা -- (আড়মোড়া ভেঙে)আ-আঃ....
মিসেস -- এবার উঠে পড় বাবা....
বু -- উঠছি।...তুমি যাও,আমি উঠছি(হাই তোলে)
মিসেস -- ঘুম তো ভেঙে গেছে,আবার উঠছি উঠছি করছিস কেন?
বু -- একটু বিশ্রাম নিই.....এতক্ষণ ঘুমোলাম না!
মিসেস -- তুই তো তোর বাবার মতোই হ'য়েছিস!
বু -- হ্যাঁ(আড়মোড়া ভেঙে)সবাই তা-ই বলে,আমার নাকি বাবার মুখ কেটে বসানো।
মিসেস -- ওঠ - ওঠ। অনেক হ'য়েছে। মুখ ধুয়ে টেবিলে চলে আয়।
মিঃ -- (একটু গলা তুলে)কই গো....শুনছ...
মিসেস -- ওই,তাঁর ডাক শুরু হ'য়ে গেল। যাচ্ছি.....
মিঃ -- তোমার ভায়ের বাড়িতে যেটা যাবে,সেই প্যাকেটটা বার ক'রে দাও!
মিসেস -- আরে,ওই বিছনার ওপরই তো গোছানো আছে!
মিঃ -- এই জন্যে বলে,সংসার সুন্দর হয় রমণীর.....
মিসেস -- থাক-থাক,অনেক হ'য়েছে। আমি জানি।
মিঃ -- কি জানো?
মিসেস -- এসব নারীদের বোকা বানানোর পুরুষতান্ত্রিক কৌশল।
মিঃ -- বা-বা,তাহলে স্কুলের মাতৃ মহলে তন্ত্রের আগমন ঘ'টে গেছে?
মিসেস -- কথাটা তো আর মিথ্যে নয়?.....
মিঃ -- একশো বার সত্যি;আর একশো বারই বা বলি কেন,হাজার বার সত্যি;তবে কি না শেষে আরও দু'টো অক্ষর যোগ হবে।
মিসেস -- মানে?!
মিঃ -- মানে...সংসার। সং-সার। সং মানে গানই যার সার। রমণী, মানে বৌয়ের গুনগান গাও তাহলে,সুখ নামের সার বস্তুটি পেয়ে যাবে। কথাটা যখন লেখা হ'য়েছিল,তখন ছিল,সংসার সুন্দর হয় রমণীর গুনগানে। কালের ধর্মে কথাটার লেজ গেছে খসে। যে জোড়া লাগাতে পারে,সে-ই সুখী;যে পারে না,তার কথা আর নতুন ক'রে না-ই বা শুনলে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন