শিউলি

                 শিউলির কবিতা 

প্রেমের চিকনাই সারা মুখে। বিভাস ব'লত, 'শিউলি ঝ'রেছে মনে'। পাড়ায় বা কলেজে বা রাস্তাঘাটে, পরিচিত, অপরিচিত - মুখের দিকে এক ঝলকেই সে বুঝতে পারত আর তার ভাষাপ্রকাশ ছিল এমনই। শিউলিতে যারা কূট গন্ধ পেত বা খুঁজত, তাদের ব'লত, 'তোদের শিউলি ফোটেনি'। নিজের সম্বন্ধে ব'লত, ঝ'রে শুকিয়ে গিয়েছে। তার প্রেমের সঙ্গে বসন্তের নয়, শরতের ছিল নিবিড় সম্পর্ক। যে বিভাস প্রেম নিয়ে এত গবেষণা ক'রত, তাকে কিন্তু কোনোদিন কোনও মেয়ের প্রেমে পড়তে দেখা যায়নি বরং বলা যায়, সে প্রেমের প্রেমে পড়েছিল। তার উচ্ছল, প্রাজ্ঞ প্রকাশ ছিল আমাদের আড্ডায়। এমনকি, রবীন্দ্রনাথের 'শেষের কবিতা'কেও তার ফুল মার্কস দিতে আপত্তি ছিল।
বিভাস। অফিসফেরতা দেখা। লালবাজারের ফুটে। গন্তব‍্য তার স্ত্রী-সন্তানের সংসার। পেশায় সরকারি চাকুরে। চায়ের ভাঁড় হাতে কলেজের সেই প্রসঙ্গ উঠতেই, আগের মতো, ডান দিকের ক্রাচের হ‍্যান্ড গ্রিপে ঘনঘন তবলা বাজানোর মতো আঙুলের টোকা আর মুখে তার সেই চিকনাই। 
একটা কবিতা লিখেছি, নিবি?
প্রেমের? দে, দেখি!
এখানে না। বাড়ি গিয়ে পড়বি।
কেমন লাগল, জানাব না?
আমার মোবাইল নেই।
ল‍্যাণ্ড লাইন? অফিসে?
দরকার নেই।
                    সেই কবিতাটা

আমার চোখে জল দেখে
তুমি বলেছিলে, 'পুরুষ নও?' 
আমি গেঁড়ে তোমার সুরে
সুর মিলিয়ে দিয়ে 
বলেছিলাম, 'আমি নপুংসক,
তুমি পুরুষ হও।'

একঘেয়ে সন্ধেবেলায়
ছাদের ওপর ভাঁজি
"আকাশ ভরা সূর্য তারা...."
মানানসই সঙ্গতে বলেছিলে
তোমার হাজার কাজের মাঝে
আমি কাজ ফুরোনো পাজি।

এখন আমি ব'সে আছি পার্কে।
মনের কোনে।
খবর পেয়েছি, পাগল আমি
মিথ‍্যে ব'সে আছি।
তবু, মুখোমুখি জায়গাটা
রাখা থাক সঙ্গোপনে।
                            


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

দুর্গাপুজোর সাত কাহন

আলয়

এসপার-ওসপার