সমান্তরাল

গেনু একতাল মাখা ময়দা পেল একশ টাকার বিনিময়ে। এবার সে সেটা বিক্রি করবে কিন্তু রাজার নিয়ম মেনে দশ টাকা রাজকোষে দিতে হবে। পেয়াদা বলল, নিয়ম না মেনে, তাকে পাঁচ টাকা দিলেই হবে। গেনু চিন্তায় প'ড়ে গেল।
চামেলী নদীতে মাছ ধ'রছিল, ভোর থাকতে। সকাল হ'লে, বাড়ি গিয়ে ঘরে খোরাকি কিছু রেখে শুকনো কাপড় প'রে, বাজারে গেল বিক্রি করতে। কিন্তু তাকেও নিয়ম মেনে পাঁচ টাকা রাজকোষে দিতে হবে। পেয়াদা বলল, নিয়ম না মেনে তিন টাকা তাকে দিলেই হবে। চামেলী পড়ল মহা ফাঁপড়ে।
এই অবস্থায় গেনুর ময়দা শক্ত হয়ে যাবার জোগার। চামেলীর মাছ পচে যায় যায়। দুজনে ছুটলো রাজার কাছে। রাজ-সাক্ষাৎ কি আর যে সে ব‍্যাপার! অনেক ঘর, বারান্দা, খিলান পেরিয়ে তারা হাজির হ'ল রাজার সামনে। হাসি হাসি মুখে রাজা বসে আছে। ওদের দেখে রাজা ভুরু উঁচিয়ে জিজ্ঞাসা করল, কি ব‍্যাপার।
ওরা সব বৃত্তান্ত বলার শেষে, গেনু বলল, তার কাছ থেকে দশ টাকা নিলে তার ময়দার দাম যাবে বেড়ে, তখন সে বেশি খদ্দের পাবে না, বরং রাজপেয়াদার পাঁচ টাকাটাই রাজা নিক তাহলে সেও খদ্দের পায়, রাজকোষেও কিছু অর্থ জমা পড়ে। চামেলীও একরকম সেই কথাই বলল। রাজা সেই কথা শুনে বলে, " তোদের আস্পদ্দা তো কম নয়, তোরা আমার বাপ-ঠাকুদ্দার নিয়ম ভাঙতে চাস! পেয়াদার নিন্দে করিস! আমার মতো রাজা পেয়েছিলিস ব'লে এ যাত্রায় ত'রে গেলি; ভাগ এখান থেকে!"
তারা বাজারে এসে দেখে ময়দা গিয়েছে শুকিয়ে, মাছ গেছে পচে।
পরের দিন তারা আবার বাজারে বসেছে। গেনু হিসেব ক'রল;
আগের দিনের নষ্ট হওয়া একশ টাকা + এখনকার ময়দার একশ টাকা + রাজার দশ টাকা + নিজের দু'দিনের আয়= সেদিনের ময়দার তালের দাম। আর রাজপেয়াদা এলে নগদবিদায়।
চামেলীও সেই পথ নিল। কিন্তু পেয়াদার নজর তো সবসময় তবিলের দিকে....তবিল একটু ফুলেছে কি চোখ রাঙিয়ে রাজার ভয় দেখায়! এরাও তখন দু'পয়সা বাড়িয়ে দেয়।
দেশের মানুষের তো জিনিসপত্র কিনতে নাভিশ্বাস উঠছে, অথচ বিক্রিবাটাও চলছে, বাজারে যোগানেরও কমতি নেই।
এদিকে রাজা দেখছে তার কোষাগারে ঘাটতি চলছে তো চলছেই। এই রকম কিম্ভুতকিমাকার অবস্থা বিচার ক'রে দেখতে রাজবিশেষজ্ঞকে ডাকা হ'ল। তিনি অনেক দিন-রাত ধ'রে ছক কেটে, অঙ্ক কষে, মাথা চুলকিয়ে মুচকি হেসে বললেন, " হে রাজন, আপনার রাজকোষের থেকেও অনেক বড় একটি কোষাগার আপনার রাজ‍্যে ছড়িয়ে আছে।"
রাজা ভাবতে বসলেন, আমার সমানে সমানে আরও একটা কোষাগার! তাও ছড়িয়ে রয়েছে! আবার সাড়া রাজ‍্য জুড়ে! এ ব‍্যাটা পাগল না সেয়ানা!?
যতদূর জানা যায়, রাজা নাকি সেই ভাবনা ছেড়ে এখনও উঠতে পারেননি।
                                            

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

দুর্গাপুজোর সাত কাহন

আলয়

এসপার-ওসপার