পোস্টগুলি

আগস্ট, ২০২০ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

খেলার পুতুল

               খেলার পুতুল তোর অবস্থা দেখে আমার ছোটবেলার কথা মনে পড়ছে। আর কাঁদিস না,কষ্ট হবে। আমিও এমন বায়না ধ'রতাম,কথাবলা হাত-পা নাড়ানো পুতুল চাই। বাড়ির একমাত্র মেয়ে ছিলাম তো! সব আবদারই মিটত,কথা বলা পুতুলের আবদার কেউ মেটাতে পারেনি। তুই এমন আবদার করিস না। কেউ মেটাতে পারবে না। বাবা তো ব'লল এনে দেবে....... তোর কান্না থামানোর জন্যে বলেছে। আর কাঁদিস না। হেঁচকি উঠছে,এবার কষ্ট হবে। হোক, পুতুল না আনলে আমি চ'লে যাব। কোথায় যাবি রে পাগলি.....একা একা খেলতে শেখ,একা একা খেলতে পারিস না? বাবা তো বলেছে এনে দেবে। তাহ'লে আর কাঁদছিস কেন? মা দোকান থেকে এসে যদি দেখে তুই এখনও কাঁদছিস.....তুই তো তারও একটা পুতুল। কথা শুনিস না ব'লে মার খাস। আমি আমার পুতুলকে অনেক জামা প‍্যান্ট পরাব। পরাবি পরাবি..... তোকে আরও কত কি করতে হবে! তাকে বসিয়ে দিতে হবে,শুইয়ে দিতে হবে,জামাকাপড় পরিয়ে দিতে হবে, খাইয়ে দিতে হবে তারপর সে একদিন চলতে শিখবে,ব'লতে শিখবে, তোর  কথার অবাধ‍্য হবে,তখন কি করবি? আমি সব করব.... তোর পুতুল যদি তোকে পছন্দ না করে? তুমি বাজে কথা ব'লছ..... বাজে কথা নয় রে,তা-ই হয়। তোর...

ভয়ঙ্কর একা

               ভয়ঙ্কর একা বিষ্টু বামুনের ছেলে মদন। লোকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাবার পুজো করার এই জীবিকাটা মদনের পছন্দ ছিল না। সারাদিনই বাড়িতে লোকজনের আসা যাওয়া ছিল। বাড়িতে এসে লোকজন খুব সম্মান দিয়েই বাবার সঙ্গে কথা ব'লত কিন্তু বাইরে বাবার নামে বদনামও কম শোনেনি। 'বিষ্টু বামুনের খুব খাঁই', 'ও মন্তর-টন্তর কিছু জানে না'.....এমন অনেক কথাই মদনের কানে মাঝে মধ‍্যে আসে। বাবাকে ব'লতেও পারে না সে সব কথা। সে জানে,বাবার পুজো-আচ্চা করাতেই তাদের সংসার চলে। তার লেখাপড়াও বাবার যজমানির টাকাতেই হয়। সে তার বাবাকে একজন আড়ম্বরহীন সাদামনের লোক ব'লেই দেখে এসেছে। সারাদিন বাবা ব‍্যস্ত থাকে। কখনও পুবের বাদা থেকে কেশে তুলে আনছে তো কখনও পাঁজি নিয়ে বসছে.....। মদনের সবচেয়ে ভালো লাগে,বাবা যখন ঠাকুর দেবতার সেবা নিয়ে নানারকম কথা বলে। কখনও আপন মনে,কখনও বা মা'র সঙ্গে। কার বাড়িতে তুলসীপাতা বেছে দেয় না, কার বাড়ির বিগ্রহের শীতের পোষাক ছেঁড়া.....এই সব নিয়ে বাবা যখন কথা বলে,তখন মনে হয়,জ‍্যান্ত কোনও মানুষকে অবহেলা করা নিয়ে ক্ষোভের কথা বলছে। মদন কখনও এসব নিয়ে মথা ঘামায় না কিন্তু বাবার এই কথাগুলো...

স্বাধীনতা

  (কোভিড মুক্ত)স্বাধীনতা মানে ………. স্বাধীনতা দিবস ছোটবেলা, সকালবেলা, পতাকাতোলা, ফুলেরমালা,হেডস্যারের কিছু বলা, এন সি সির কদমতল আর লজেন্সবিস্কুট। মনে পড়ে। এই দিনই বিভাস জেনেছিল আজ ঋষি আরবিন্দের জন্মদিন। বারুদের গন্ধ থেকে ধূপের গন্ধ হ’য়ে ওঠার গল্প। বারুদের গন্ধ বিভাসের জীবনে আসেনি। ধূপের গন্ধেই জীবন ভ’রে আছে। ইংরেজী ট্রানস্লেসান,সুদ কসার অঙ্ক বুঝতে বুঝতেই কৈশোর হারিয়েছে। সেখানে স্বাধীনতা কোথায়? তাই সব কিছু না বুঝতে বুঝতেই সব বোঝা। লোককে বোঝাতেও ছাড়েনি, মন্ত্রী-আমাদের মতোই একজন নাগরিক। প্রধান- আমারই গ্রামের লোক। ভোটই আমাদের পবিত্র হাতিয়ার ইত্যেকার সব জনগনতান্ত্রিক চিন্তাভাবনাতেই সে বেশ দড়। ইসমিতারা। শিক্ষিতা।স্বাধীন। বিভাসরা ভালোবেসেছিল। কিন্তু পথে ঘাটে এমন চোখরাঙানি ……. পায়েল,বাবা মা’র কালচার তাকে স্বাবলম্বী করেছে। প্রায় একক চেষ্টায় ক্রেশ চালায়। পারিবারিক স্ট্যাটাসের গোপন লালন নেই। বিভাসরা একসঙ্গে থাকে। কোনও প্রবলেম নেই। আজ স্বাধীনতা দিবস। বিভাসের মনে হয় তিন্নি, বাচ্চু নিশ্চয় সকালবেলা-পতাকাতোলা-ফুলেরমালায় আছে। বিভাসের বাবার ইচ্ছেতেই যে যার স্বাধীন জায়গা বেছে নিয়েছে দাদারা। পাঁচজন...

একান্ত

  একান্ত ধর্ম আমার রাতের বিছানা, একান্ত আশ্রয় হ’য়ে ওঠে। নিভৃতির চারপাশে লতা গুল্ম বৃক্ষ সব পাশাপাশি থাকে ডানা ভাঙা কাক, ধূর্ত নেংটির চকিত আসা যাওয়া মৃত্যুর   আঁধারকে জীবন্ত রাখে। মহা মহিম ধর্ম আমার আঁধারেও দেখার ক্ষমতা দেয়।   ধর্ম আমার আয়না, আমি উলঙ্গ ধর্মের কাছে নিভৃত চাহনিতে অপলক দেখা আনখশির। এই আমি সেই তুমি হ’য়ে ওঠে, রোমাঞ্চ জাগে শিরা উপশিরা জেগে ওঠে তুমুল উচ্ছাসে।   নিভৃতির গোপনে রাত জেগে ওঠে হুজুগের রাহুগ্রাসে আচ্ছন্ন সকালে শকুন শেয়ালেরা জোট বেঁধে ডাকে। -

রকিং চেয়ার

রকিং চেয়ার নদীর পাড়ে যেতে রাস্তার মাঝপথেই পড়ে জায়গাটা। শিরীষ তলা, কেউ কেউ বলে খিরিস তলা। এলাকাটার বেশ পরিচিতি হয়েছে। বিশাল শিরীষ গাছের তলায় ঘেঁষাঘেঁষি করে অনেকগুলো পুরনো আসবাবের দোকান গজিয়ে উঠেছে। বিপুল বাবু প্রতিদিন বিকেল হ’লে নদীর পাড়ের আড্ডায় যেতেন। ওখানে গঙ্গা দেবীর থানে বয়স্কদের একটা আড্ডা বসে। এখন লকডাউনে বন্ধ। লকডাউন না থাকলে সমবয়সীদের সঙ্গে বিকেলটা গঙ্গার ধারেই কাটে। যাতায়াতের পথে এই পুরনো আসবাবগুলোকে একবার ক’রে চোখ বোলানো বিপুলবাবুর এক সাম্প্রতিক অভ্যাস। লকডাউন শিথিলের এক বিকেলে বাড়ি ফেরার পথে একটা রকিং চেয়ারে হঠাত বিপুল বাবুর চোখ আটকে গেল। পুরনো মেহগিনি পালিশের জায়গায় জায়গায় ঘষা ভাব। তবে বেশ আভিজাত্য আছে। এই রকম একটা চেয়ারের বাসনা হয়তো একদিন তাঁর ছিল ব’লে সেই সময় মনে হ’ল। হাজারো চাহিদা আর অভাববোধের হিজিবিজিতে কবে সেটা হারিয়ে গিয়েছিল। বেশী বয়সের একমাত্র সন্তান কোম্পানীর সেলস ম্যানেজার হ’য়ে বাইরে থাকে। মাসে দু’তিন বার বাড়ি আসত। এখন তাও বন্ধ। টাকা পাঠায়,এখন একটু কম। নিজের যৎসামান্য পেনসন। দুই বুড়ো-বুড়িতে নিরালা নিরিবিলি জীবন। দক্ষিণের বড় জানলার সামনে এই সঙ্গীটিকে বেশ লাগবে …...