পোস্টগুলি

সেপ্টেম্বর, ২০২০ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

শিউলি

ছবি
                 শিউলির কবিতা  প্রেমের চিকনাই সারা মুখে। বিভাস ব'লত, 'শিউলি ঝ'রেছে মনে'। পাড়ায় বা কলেজে বা রাস্তাঘাটে, পরিচিত, অপরিচিত - মুখের দিকে এক ঝলকেই সে বুঝতে পারত আর তার ভাষাপ্রকাশ ছিল এমনই। শিউলিতে যারা কূট গন্ধ পেত বা খুঁজত, তাদের ব'লত, 'তোদের শিউলি ফোটেনি'। নিজের সম্বন্ধে ব'লত, ঝ'রে শুকিয়ে গিয়েছে। তার প্রেমের সঙ্গে বসন্তের নয়, শরতের ছিল নিবিড় সম্পর্ক। যে বিভাস প্রেম নিয়ে এত গবেষণা ক'রত, তাকে কিন্তু কোনোদিন কোনও মেয়ের প্রেমে পড়তে দেখা যায়নি বরং বলা যায়, সে প্রেমের প্রেমে পড়েছিল। তার উচ্ছল, প্রাজ্ঞ প্রকাশ ছিল আমাদের আড্ডায়। এমনকি, রবীন্দ্রনাথের 'শেষের কবিতা'কেও তার ফুল মার্কস দিতে আপত্তি ছিল। বিভাস। অফিসফেরতা দেখা। লালবাজারের ফুটে। গন্তব‍্য তার স্ত্রী-সন্তানের সংসার। পেশায় সরকারি চাকুরে। চায়ের ভাঁড় হাতে কলেজের সেই প্রসঙ্গ উঠতেই, আগের মতো, ডান দিকের ক্রাচের হ‍্যান্ড গ্রিপে ঘনঘন তবলা বাজানোর মতো আঙুলের টোকা আর মুখে তার সেই চিকনাই।  একটা কবিতা লিখেছি, নিবি? প্রেমের? দে, দেখি! এখানে না। বাড়ি গিয়ে পড়বি। কেমন লাগল, জানাব না? আমার...

দুর্গাপুজোর সাত কাহন

ছবি
              সাত কাহন                              এক মতামত দুর্গাপূজার সময় সারণি তৈরী হয় দু'টি পঞ্জিকার কোনো একটিকে অনুসরণ ক'রে। এক,গুপ্তপ্রেশ পঞ্জিকা,আর এক,বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা। দু'টি পঞ্জিকা দু'টি ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে তিথি নির্ণয় করে ফলে,তাঁদের গণনায় কিছু ফারাক থাকে ফলস্বরূপ,আমরা দু'রকম সময় নির্ঘন্টে দুর্গাপুজো হ'তে দেখি। ব‍্যতিক্রম বোধহয় এই বছরেই হ'ল যে, দু'টি পাঁজিতেই এবার আশ্বিন মাসকে মলমাস ব'লে নির্ণয় করা হয়েছে। পূজা পদ্ধতির সঙ্গে পাঁজির কোনও সম্পর্ক নেই। পূজা পদ্ধতির ক্ষেত্রে 'দেবীপুরাণ',' 'বৃহন্নন্দিকেশ্বর পুরাণ','কালিকা পুরাণ', এমনই কোনো একটি উপপুরাণকে মান‍্যতা দেওয়া হয়। পূজা পদ্ধতির ক্ষেত্রেও তাই বিভিন্নতা দেখা যায়।                           দুই কলাবৌ কলাবৌ গণেশের বৌ নয়। কলাবৌকে বলা হয় নবপত্রিকা। এটা একটা স্বতন্ত্র গ্রামীণ লোক ধর্মের প্রতিরূপ। দুর্গামণ্ডপে এই লোকধর্মের আগমন...

শিশু দিবস

ছবি
                   সুন্তুমুনুর কেনা                                                           আমার বাচ্ছাটাকে সবাই খুব ভালোবাসে, কিন্তু ও তো অত বোঝে না..... তাই কাঁদে, সবার কাছে যায় না সে। গাল টেপা, সুন্তুমুনু, কত আদরের ভাষা বেচারি আমার বাচ্ছাটা, একটু বুঝত যদি... ওকে আবার কেমন সবাই আদর ক'রে রাগায় ও-ও তখন হাবি-জাবি কত কথা শোনায়  সে সব শুনে সবাই হেসে বেদম লুটোপুটি ও তো অত বোঝে না, তাই কাঁদে আমার বাচ্ছাটাকে সবাই খুব ভালোবাসে। আরে সেদিন দেখোনা, কে বলল, 'তোর মাকে নিয়ে যাব' অমনি তার সেকি কান্না, মাটিতে শুয়ে পড়ল। আমি বললাম, অমন করে না সোনা, সবাই ভালোবাসে! সে কি বোঝে, সে তো নাছোড়, কিছুতেই উঠবে না। ও কি বোঝে, সব বাচ্ছাকে সবাই ভালোবাসে রাগিয়ে দেওয়া, পেছনে লাগা, এগুলো তো মজা শুধু শুধু কেউ ভালোবাসে? একটু মজা করবে না? তোকে সবাই এত ভালোবাসে, তার মূল‍্য চোকাবি না!       ...

দু'টো লেখা

ছবি
                             এক দেশটাকে তুমি ভাবতেই পারো তোমার খুশিমতো দেশটাকে তুমি গ'ড়তেই পারো তোমার মনমতো দেশটা কারো একার নয়,তুমিও  একজন, স্বপ্ন তুমি দেখতেই পারো দেশের মানুষ নিয়ে। অতলবাসী মানুষ তার পাতালবাসী জান। আনতেই পারো তুলে তাকে দিতেই পারো আসন। মানুষ তো আর অন‍্য নয় তুমিও একজন তোমার দেশের মানুষ হবে তোমারই মতন। বাদ দিতে যদি তৈরী তোমার স্বপ্নদেশ, তুমিও বাদই থেকে যাবে.......  নরকের এই প্রাচীন সন্দেশ।                                                                      দুই আমার দেশকে সবাই মা বলে। তার আছে অযুত সম্পদ, তার সাত সন্তান সাত অবতার। মতে মিল নেই, মনে মিল নেই দেখতেও এক একরকম শুধু মেলে তাদের স্বর, মা ডাকে। একজন চেঁচায় তো আরেক শান্ত থাকে অপরজন উদাসভাবে ফন্দি আঁটে। মারামারি, দলাদলি তো লেগেই আছে; তারই ফাঁকে, যখন মা...

শ্রুতি নাটক

ছবি
                        গুরুজন চরিত্র -- মিঃ ঘোষ, মিসেস ঘোষ , বুম্বা(ছেলে)।   সময় -- সকাল মিসেস ঘোষ -- (সবেমাত্র ঘুম ভেঙেছে)আ-আঃ....এই শুনছ? (হাই তোলে) তোমায় আজ তাড়াতাড়ি বেরোতে হবে বলেছিলে! এই...শুনছ? মিঃ ঘোষ -- হুঁ...(ঘুমন্ত) মিসেস -- তাড়াতাড়ি বেরোবে বলেছিলে না!....ওঠো! মিঃ -- হ‍্যাঁ -- হ‍্যাঁ....দেরী হ'য়ে গেল? আমার মোবাইলটা একটু দাও তো! মিসেস -- অ্যা-ই শুরু হ'ল। চোখ খুলেই ফরমাস। মিঃ -- কি করব বল,চোখ বুজোনো তো আমার ইচ্ছায় হবে না। মিসেস -- রাম-রাম, সক্কাল বেলায় এ কী অলুক্ষুণে কথা! মিঃ -- সকালবেলার শেষ পাতের ঘুমটা কেড়ে নেওয়াও কি খুব সুলক্ষণের কথা? মিসেস -- দেখ,তুমিই কাল বলেছিলে,আজ সকাল সকাল বেরবে। মিঃ -- সে কথা বলেছিলাম,কারণ তোমার ভা'য়ের বাড়ি তত্ত্বটা দিয়ে যেতে হবে ব'লে। মিসেস -- তত্ত্ব!?.....বচ্ছরান্তে তাদের ক'টা কাপড়-জামা দেওয়া হয়,তাকে তুমি তত্ত্ব বলছ? মিঃ -- এ তত্ত্ব সে তত্ত্ব নয় রে বাবা,এ হ'ল সংসারে শান্তি বজায় রাখার তত্ত্ব। মিসেস -- অত কথার কি আছে? অসুবিধে থাকলে যাবে না! মিঃ -- গুরুজনের কথার অবাধ‍্য হও...

প্রতীক্ষার পুজো

ছবি
  প্রতীক্ষার পুজো কমল কাকা আমার জন্যে ব’সে আছে। এক সঙ্গে খাবে। বেলা বেড়েছে, মা ফোন করেছিল। …. কমল কাকা, আমার প্রথম চাকরীটা ক’রে দিয়েছিল। মা কৃতজ্ঞ। আমাদের বিশাল বড় ফ্যামিলির এক রকমের কাকা। আমার সঙ্গে কিন্তু কোনও সম্পর্ক নেই। কমল কাকাই সতর্ক ক’রে দিয়েছিল,সেই প্রথম চাকরীর প্রথম কোম্পানির পার্টিতে। অনেক দিন আগে। মা জানে না। কথাটা হঠাৎ মনে এল। মদ স্মৃতিপথকে ভেজায়। দুর্গা পুজোর ক’দিন এই ভাবেই কাটে। ভাল লাগে। ফোনটা সুইচ অফ করলাম। এতক্ষন বন্ধুরা সব ছিল। যে যার বাড়ি গেল। স্নান খাওয়া ঘুম সেরে সন্ধে বেলা ওদের সপরিবার ঠাকুর দেখা। আমার সে পাট ঘুচে গেছে। ওরা রাতে সব আসবে । এই ক ’দিনের জন্য সারা বছরের অপেক্ষা। এমন নিশ্চিন্তে মদ খাওয়া দুর্গা পুজো ছাড়া সম্ভব হয় না। প্রচুর স্টক। বন্ধুরা মিলে করা হয়। যার যখন যত খুশি মদ খাও। খাচ্ছিও। সর্বজনীনে ভোগ নেওয়ার জন্য ডাকছে। কানুর গলা। সকাল থেকে রাত্রি, কানু একাই সব ঘোষণার দায়িত্বে। কানুরও নিশ্চয় সারা বছরের প্রতীক্ষা থাকে এই ক’টা দিনের জন্যে। সব পাড়াতেই এমন এক একজন থাকে। মাইক-হ্যাংলা ব’লে প্যাঁকও খেতে হ’য়। কিন্তু মাউথ-পিস দেখলেই এদের মাথার ঠিক থাক...

অকৃতজ্ঞ

                 অকৃতজ্ঞ  চোখ খুলে কাকলি দেখল অনেকগুলো মুখ। তার দিকে ঝুঁকে,তাকে দেখছে। একটা অল্প বয়সের মেয়ে তার কোমরে সাপোর্ট দিয়ে ব'সে। তার মাথাটা কারো কোলে। সারা মাথা,মুখ ভিজে। ভীষণ নিস্তেজ লাগছে। নিজের ঘর-মেয়ের মুখ-ট্রেন কম্পার্টমেন্টের ভিড় চকিতে মনে ভিড় ক'রে এসেই....ওঠার চেষ্টা ক'রল। প্রথমেই অল্প বয়সী মেয়েটা,কপালে,মাথায় হাত বুলিয়ে,আশ্বস্ত ক'রল। ভিড়ের থেকে অনেকেই তার সঙ্গে গলা মেলাল।শুয়ে থাকতে হ'ল। কী হ'ল!? কিছু বুঝতে পারছে না। ডান হাঁটুটায় জ্বালা করছে। কেউ একজন কপালে ঠাণ্ডা কিছু চেপে ধ'রল। ডান রগটা টন্ টন্ ক'রে উ'ঠল। কাকলি হাত দিয়ে সরিয়ে দেবার চেষ্টা ক'রল। তখনও সবাই আশ্বস্ত ক'রল। কাকলির গলাটা শুকিয়ে আছে। জল চাইল। মাথার দিক থেকে একটা ছেলে সামনে এল। মাথায় ফেজ,গালে দাড়ি,জামা-প‍্যান্ট পরা,হাতে জলের বোতল। কাকলির মুখে জল দিতে চাইছিল। কাকলি হাত নেড়ে তাকে বারন ক'রল। আবার উঠে ব'সতে চাইল। সবাই বুঝল। যাঁর কোলে মাথাটা ছিল তিনি খুব যত্নে খুব আস্তে আস্তে কাকলিকে বসিয়ে দিলেন। হাত দিয়ে জলের বোতলটা নিতে গিয়েও পা'রল না। দাবনাটায় খুব ব‍্যাথা লাগ...

আলয়

                  আলয় আজ দিনটাতে তো ভোরবেলা থেকেই উৎসবের আমেজ। মনে আছে,ছোটবেলায় এই দিনটাতে,দিনের আলো ফুটতে না ফুটতে,শিউলি গাছতলায়। কয় ভাইবোনে কম্পিটিশান ক'রে ছুটতাম। পাশেই অনুদের বাড়িতে। গাছটা একটা গন্ধ ছড়াতো। সারাদিন। ছ‍্যাঁক্-ছ‍্যাঁকে সকালবেলা। সারা শরীরে শিউলির গন্ধ মাখা। হাতে চুপড়ি। আলতো হাতে একটা একটা ক'রে ফুল কুড়োনো। ভাই বোনে মিলে মালা গাঁথতে বসা। আমাদের বারান্দায়। শিউলির বোঁটাগুলো কাঁচিতে ছোট ক'রে নেওয়া। আলতো ছোঁয়ার নিপুন শিল্প। আমি আর দাদা একটা সুতোর দু'দিক থেকে গাঁথতে শুরু করতাম। বোঁটা কাটা থাকলে,শিউলি ফুল দিয়ে বেশ নিটোল,তুলতুলে মালা তৈরী হয়। প্রতি বছর দাদুর ছবিতে পরানো হ'ত। ঠাকুমা ছোট বালতিতে শিউলির বোঁটাগুলো তুলে রাখতো। দু'-এক দিনের মধ‍্যেই মিনুর জন‍্য কাপড় ছোপানো হবে। বাবা কপালে,দাবনায়,গলায় মাটির তিলক কেটে গরদ প'রে,গায়ের চাদরটাকে পৈতের মতো গলায় ঝুলিয়ে,অনুদের পুকুরে তর্পণ করত। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতাম। কেন কে জানে,সেই রেডিও খোলা থেকে,এই দিনটাতে,মাঝে মাঝেই চোখে জল চ'লে আসত। এখনও হয়তো....এই যাঃ! ডিশটা বাবার ঘর থেকে আনা হয়নি!.......সে ব...

পুতুল খেলা

          পুতুল খেলা আমি পুতুল খেলতে ভালোবাসি          পুতুল পুতুল খেলা,          ছেলে পুতুল,মেয়ে পুতুল           আমার ছোটবেলা।          আজও আছে পুতুল খেলার           গভীর নাড়ির টান          ছেলে হোক বা মেয়ে হোক          সে আমার সন্তান। যাকে খাইয়ে দেব পরিয়ে দেব          যেমন দিতাম আগে          পুতুল নিয়ে ক'রতে খেলা          আজও ভালো লাগে।          বিদ্বেষী সব মনস্তত্ত্ব           বলে নাকি,কতৃত্ব।          জানতে,যদি মা হ'তে-          কাকে বলে মাতৃত্ব।             ___________